মহাখালী খাজা টাওয়ার একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিকম হাব। এতে আছে অসংখ্য ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও বেশ কয়েকটি মুঠোফোন কোম্পানির ডাটা সেন্টার। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় দেশের ৭০ শতাংশ প্রযুক্তি সার্ভার। ৯০-এর দশকে নির্মিত এ ভবনে একসঙ্গে এতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কাজ করার যে সক্ষমতা দরকার, তা নেই বলে জানালেন প্রযুক্তিবিদরা।
তাছাড়া এ টাওয়ারে দেশি ছাড়া অনেক বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও আছে। এগুলো বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় ইন্টারনেটও সরবরাহ করে। শুধু তাই নয়, দুয়েকটি বড় মুঠোফোন কোম্পানির ডাটা সেন্টারের আংশিকও সংরক্ষণ করা হয় এ ভবনে। ১৪ তলা ভবনের প্রায় প্রতিটি তলাতেই ছোট-বড় অসংখ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ, জেনারেটর ও অন্যান্য ইলেকট্রিক সিস্টেম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে।
এদিকে এখানকার প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, খাজা টাওয়ার মূলত পুরোপুরি একটা টেলিকম ভবন। কারণ এ ভবন থেকেই সারা দেশের বড় টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের সার্ভিস অপারেট করে। এতগুলো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে থাকার নিয়ম না থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনটির বাইরে দেখা যায়, যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনিরাপদ বৈদ্যুতিক লাইন। বাইরের পরিবেশই বলে দেয়, ভেতরে কতটা নাজুক সুরক্ষাবলয় আছে।
আরও বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে এ টাওয়ার থেকে অধিকাংশ অফিস সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ প্রযুক্তিবিদদের। তারা বলেন, ৯০-এর দশকে নির্মাণ করা ভবনটিতে আধুনিক সময়ের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার মতো পরিবেশ নেই। তাছাড়া একসঙ্গে এত আইটি সংস্থা কাজ করলে যে ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পাওয়ারের ব্যবহার হয়, তা সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন হয়ত প্রতিষ্ঠানগুলো চিন্তা করবে যে, আরও কীভাবে পরিকল্পনা করা যায়!
এদিকে প্রযুক্তিবিদরা বলেন, এগুলো বিকেন্দ্রিকরণ করে বিভিন্ন জায়গায় নেয়া উচিত। সময় এসেছে, এটাকে আরও কীভাবে নিরাপদ করা যায়- এটা ভাবার। সরকারকে এ জায়গায় আরও ফোকাস দিতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন করে আলোচনায় আসে খাজা টাওয়ার। একটি ভবনে এত ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের এক সঙ্গে একাধিক বৈদ্যুতিক সিস্টেম কার্যকর থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উত্তরের সিটি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ অগ্নিকাণ্ডে ব্রডব্যান্ডসহ সব কিছুই ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে যত তাড়াতাড়ি ক্যাবলগুলোকে মাটির নিচে নিতে পারবো, ততো তাড়াতাড়ি আমরা নিরাপদ হতে পারবো।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫০০ ইন্টারনেট প্রোভাইডার, দেশীয় কয়েকটি মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক, এমনকি গুগল ও ফেসবুকের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেশীয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়।